/ সারাদেশ / দুগ্ধ খামার দিয়ে পাল্টে গেছে কালাইয়ের আমিরুলের জীবন চিত্র
দুগ্ধ খামার দিয়ে পাল্টে গেছে কালাইয়ের আমিরুলের জীবন চিত্র
আব্দুন নুর নাহিদ,কালাই(জয়পুরহাট):
|
দারিদ্রক্লিষ্ট জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখী হয়েও হার না মেনে জয় করার স্বপ্ন ছিল এক গ্রাম্য যুবকের। অবশেষে জয়ী হলেন তিনি। টাকার অভাবে তিনি পড়ালেখা করতে পারেননি। একসময় তিনি তিন বেলা ঠিক মত খেতে পারেননি । একসময় যার মুখে একফোটা দুধ দেবার সাধ্য ছিল না । সেই অসাধ্য সাধন করে দুগ্ধ খামার দিয়ে তিনি এখন দৈনিক প্রায় ৪০ লিটার দুধ বাজরে বিক্রি করেন। এছাড়া যে কটি গরু আছে তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। কিনেছেন ১২ শতাংশ বাড়ি করার জায়গা এবং ধানি জমি ৫০ শতাংশ। তিনি এখন ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। বর্তমান তিনি এখন স্বাবলম্বী ।
সরেজমিনে আলাপ কালে জানা গেছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার দুরুঞ্জ গ্রামের ওই স্বপ্নচারী মানুষ হলেন আমিরুল ইসলাম। তার বাবা আব্দুল মোমেন আর মা ছকিনা বেগমের পাঁচ সন্তানের সাংসারিক টানপোড়নের কারণে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখায় ছেদ পড়ে আমিরুল ইসলামের। ফলে, বাবার সাথে তাকে ধরতে হয় সংসারের হাল। এমনই এক পরিস্থিতিতে গত ২০০০ সালে কম বয়সে বিয়ে করে যখন নতুন সংসার শুরু করেন, তখন দুচোখে সর্ষেফুল দেখেন তিনি। শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। তিনি তিন বেলা ঠিক মত খেতে পারতেন না । নিজের কষ্ঠের জমানো কিছু টাকা দিয়ে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে দুই/এক ধান কিনে বাড়িতে এনে তারা সিদ্ধ-শুকান করে চাল তৈরি করেন । আর সেই চাল তিনি নিজ কাঁধে করে বিভিন্ন হাট-বাজরে বিক্রি করে, যা আয় হত তা দিয়ে কোন মতে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইতোমধ্যেই তাদের সংসারে পর পর দুই সন্তানের জনক-জননী হওয়ায় বাড়ে খরচের পরিমাণ। দিশেহারা হয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। এমন এক সময় অন্যের বাড়িতে টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার মাধ্যমে জানতে পান কর্মসংস্থান ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে। পরে তিনি কালাই উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে গাভী কিনে দুগ্ধ খামার পরিচালনা করেন। এরই মধ্যে থেকে দুগ্ধ খামার দিয়ে তার জীবন যাত্রার আমুল পরিবর্তন আসে। কিনেন ১২ শতাংশ বাড়ি করার জায়গা এবং ধানি জমি ৫০ শতাংশ । পাশাপাশি নিতে থাকেন ৬ বিঘা বর্গা জমিও । ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষের বিষয়ে মনোযোগ দেন তিান। তার স্ত্রী এখন হাসঁ,মুরগী, ছাগল,ভেড়া পালন করেন। বর্তমান তাদের আগের মত অভাব নেই। বড় ছেলে বেসরকারি স্কুলে নবম শ্রেণিতে এবং মেয়ে মাদ্রাসা লাইনে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তিনি ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনার খরচ দেন। তার পরিবারে এখন ইটের বাড়ি, টেলিভিশন, ফ্রিজ, মুটোফোন, ফ্যান, পানি তোলা জন্য বরেন্দ্র মেশিন, খাট, ছোফাসহ অনেক আসবাবপত্র আছে। প্রতিদিন তার খামার থেকে প্রায় ৪০ লিটার দুধ বাজারে বিক্রি করেন, যা বর্তমান দুধের বাজারে ওই সব দুধের মুল্য প্রায় ১৬শ টাকা। তার পরিবারের সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তিনি আয় করেন প্রায় ১ হাজার টাকা।এছাড়া যে কটি গরু আছে তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। বর্তমান তিনি এখন লাখপতী । অতিতের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, দুগ্ধ খামার দিয়ে এখন আমার সংসার আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমার সংসারের সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন গাভীর দুধ বিক্রি করে আয় করছি প্রায় ১ হাজার টাকা । প্রয়োজনের সময়ে আর্থিক সহযোগিতা পেলে যে কোন মানুষ তার শ্রম আর দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে দারিদ্রকে জয় করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কালাই শাখা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক (পি ও) ওবাইদুর রহমান বলেন,কর্মসংস্থান ব্যাংকের সহযোগিতা গ্রহণ করে কোন মানুষ তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করে নিজের ভাগ্যের চাকাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন,ওই আমিরুল ইসলাম দুগ্ধ খামার দিয়ে দারিদ্রতা জয়ের এক মূর্ত প্রতীক । কালাই উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জহুরুর ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরা আমিরুল ইসলামের দুগ্ধ খামার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করে আরছি। |