/ সারাদেশ / ইয়াবা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন গোপালগঞ্জের এসআই নাজমুল
ইয়াবা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন গোপালগঞ্জের এসআই নাজমুল
নতুন বার্তা, সীতাকুণ্ড:
|
এসআই নাজমুল হুদা'র বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার মকশেদপুরে। গোপালগঞ্জের প্রভাবে তিনি পরোয়া করতেন না কাউকে। প্রায় সময়ই ইয়াবা দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিরীহ মানুষ থেকে আদায় করতেন বড় অংকের টাকা।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী উপজেলার তেলিপাড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম (১৬) নামের এক কিশোর। তার বড় ভাই দিদারুল আলম অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো পুলিশ। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হুদাসহ সীতাকুণ্ড থানার আরও তিন জন এসআই মাঝে মধ্যে আমাদের এলাকায় আসতো। স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ইয়াবা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো তারা। পরে মানুষের কাছ থেকে যা পেতো হাতিয়ে নিতো। ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে যদি ২০ হাজার টাকাও কেউ দিতো তাও তারা নিতো। আবার কেউ ১০ হাজার টাকা দিলে তাও নিতো।’ তেলিপাড়ায় সাইফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের এসআই নাজমুল হুদা, কনস্টেবল আবুল কাশেম ও আনসার সদস্য ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে ২৫ জানুয়ারি ঘটনার পর তাদের প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। নিহত সাইফুলের বড় ভাই ও হত্যা মামলার বাদী দিদারুল আলমের অভিযোগ, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ প্রকাশ্যে টাকা নিতেন। কিন্তু এসআই নাজমুল প্রকাশ্যে না নিয়ে সোর্সদের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো। ঘটনার দিনও আমাদের এলাকায় চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিল সে। কিন্তু তার কুকর্ম বেশি হয়ে যাওয়ায় ওইদিন দুর্ঘটনাটি ঘটে।’ সেদিন কী ঘটেছিল জানতে চাইলে মামলার এই বাদী বলেন, ‘রাজু নামে স্থানীয় এক সোর্স এসআই নাজমুলকে খবর দিয়ে এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা কোনও মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজে পায়নি। ফেরার পথে তারা আমার ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে চাইলে সে (নিহত সাইফুল) আপত্তি জানায়। সাদা পোশাকে থাকায় সে পুলিশের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে এসআই নাজমুল তাকে সামনে থেকে গুলি করে। পরে গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া দিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। পুলিশের গুলিতে তখন কবির আহমেদ ভোলা (৫৫) ও ইমরান আলী জয় (১৯) আহত হন।’ দিদারুল আলমের মতো একই অভিযোগ ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাজীম উদ্দিনের। তার বক্তব্য হলো, ‘পুলিশ বিভিন্ন সময় আসামি ধরার নামে নিরীহ তরুণদের ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলার ভয় দেখাতো। মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। এসআই নাজমুল সেদিন আসলে কী কারণে তেলিপাড়ায় গিয়েছিলেন তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তবে তিনি যে কারণেই যান না কেন, তিনি যা করেছেন তা খুবই অন্যায়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। সাইফুল নিহতের কারণে এলাকায় এখন চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আমরা চাই, তেলিপাড়ায় শান্তি ফিরে আসুক।’ গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের দফাদার গোলাম কিবরিয়ার বলেন, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেছি, গ্রেফতার এসআই নাজমুল হুদা প্রায়ই মানুষকে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করতেন। তবে আমি নিজের চোখে দেখিনি।’ গত ২৪ জানুয়ারি রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে এলাকাবাসী জানান, অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন সদস্য সাদা পোশাকে রাত ৯টার দিকে তেলিপাড়া এলাকায় টহল দিতে যান। এ সময় পথে আড্ডারত সাইফুল ইসলামসহ তিন জনকে জোর করে ধরে নিয়ে যেতে চান তারা। স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে সাইফুলসহ অন্য দুই জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সাইফুলের মৃত্যু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানায়, এসআই নাজমুল বরাবরই ভয়বহ। তিনি গোপালগঞ্জের প্রভাবে কাউকে পরোয়া করতো না। এখন পুলিশ বাধ্য হয়ে এসআই নাজমুলকে গ্রেফতার করলেও গোপালগঞ্জের প্রভাবে এসআই নাজমুল শীঘ্রই আবার পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পাবে। এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল— ইয়াবা থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়ে তেলিপাড়া এলাকায় আসামি ধরতে গিয়েছিলেন বলে অভিযুক্ত তিন জন জানিয়েছেন। এ সময় গ্রামবাসী তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা গুলি ছোড়েন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত এসআই নাজমুল হুদাসহ ওই তিন জনের ২৪ জানুয়ারি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। তারা থানাকে না জানিয়েই তেলিপাড়ায় গিয়েছিলেন। এমনকি সেখানে অভিযানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকে কিছু জানাননি তারা। |