/ জাতীয় / মাওলানা সা’দ ইজতেমায় আসবেন না
মাওলানা সা’দ ইজতেমায় আসবেন না
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আনোয়ারুল লতিফ খান জানিয়েছেন, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন না বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক চলছে। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ইজতেমা মাঠের পাশে র্যাব ক্যাম্পে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের জানামতে সম্ভবত মাওলানা সা’দ এখানে আসবেন না। মাওলানা সা’দ এখানে আসবেন কি আসবেন না এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক চলছে। সিদ্ধান্ত হলে আমরা জানতে পারবো। এছাড়া আইনশৃঙ্খলার সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইজতেমা মাঠের চারপাশে নিয়োজিত রয়েছেন।’ গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ মোবাইল ফোনে জানান, ‘র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছয় হাজার সদস্য ইজতেমা ময়দানে নিয়োজিত রয়েছে। মাওলানা সা’দ আসবেন কিনা সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দায়িত্ব ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’ তাবলিগ জামাতের একাংশ ও কওমিপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণ ঠেকাতে মাঠে নেমেছে। বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সা’দের অংশগ্রহণ ঠেকাতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমা মাঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুছ। এদিকে বুধবার ঢাকায় আসার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করছেন মাওলানা সা’দ। দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তাবলীগ জামাতের একাংশ এবং আলেমরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সা’দ বিরোধীদের সমাবেশে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সা’দ বিরোধীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশে অংশ নেন কওমীপন্থী আলেম ও তাবলিগ জামাতের একাংশ। সমাবেশে কওমী আলেম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘মাওলানা সা’দ থাকলে কেউ ইজতেমায় অংশ নেবেন না। ইজতেমায় সা’দকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হচ্ছে। ইজতেমাকে নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’ তাবলিগের জিম্মাদার মাওলানা লোকমান বলেন, ‘মাওলানা সা’দের উপস্থিতিতে কোনও ইজতেমা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ যদি আমাদের বাধা দেয়, তাহলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তবে তার দায় সা’দকে নিতে হবে।’ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া নিয়ে তাবলিগ জামাতপন্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সা’দকে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন কওমিপন্থীরা। তিনি ইজতেমায় অংশ নেবেন কিনা সেব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে না সরকার। বরং বিষয়টি দিল্লির এই মুরব্বির ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মাওলানা সা'দ ইজতেমায় অংশ নাও নিতে পারেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে নিরাপত্তা দেওয়া।’ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে তিনি এই কথা বলেন। তাবলিগ জামাতের একাংশ ও কওমিপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণ ঠেকাতে মাঠে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা জানতে চাওয়া হলে ডিএমপি কমিশনার এই কথা বলেন। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘সা'দ বিশ্ব ইজতেমায় যাবেন কি যাবেন না তা উনার বিষয় এবং ইজতেমা আয়োজকদের বিষয়। সরকারের তরফ থেকে দায়িত্ব হচ্ছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা সেটা করছি যেন কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। কাকরাইল মসজিদের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরাও রয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে আইপিএইচ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তাবলিগ জামাতের বিরোধপূর্ণ দুই ভাগ একত্র হয়ে যা সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটাই শুনবো। আমরা নাক গলাতে চাচ্ছি না। এখানে আমরা কোনও দলের সঙ্গে একত্র হতে চাই না। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না।’ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসা মাওলানা সা’দ বর্তমানে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করছেন। তাকে নিরাপত্তা দিতে মসজিদ ঘিরে রেখেছে পুলিশ। অন্যদিকে, সা’দ বিরোধীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তবে বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সা’দের অংশগ্রহণ ঠেকাতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমা মাঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুছ। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘মাওলানা সা’দকে কোনও অবস্থাতেই ইজতেমা মাঠে যেতে দেওয়া হবে না। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছেলেরা ইজতেমা মাঠের মঞ্চ পাহারা দেবে। দুই হাজার ছাত্র কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেবে এবং চার হাজার ইজতেমা মাঠে যাবে।’ রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন জোয়ার্দার জানান, সকাল ১০টার দিকে তাবলীগকর্মীরা প্রেসক্লাবে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঠেলে দেয়। তারা এখন সেখানেই অবস্থান করছে। এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করা বেফাকের আলেম ও রাজধানীর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে কাকরাইল ও টঙ্গী যাওয়ার নির্দেশ দেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ। তিনি বলেন, “মাওলানা সা’দকে কোনও অবস্থাতেই ইজতেমা মাঠে যেতে দেওয়া হবে না। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছেলেরা ইজতেমা মাঠের মঞ্চ পাহারা দেবে।” বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, মহাখালী এলাকার মাদ্রাসাগুলো থেকে দুই হাজার ছাত্র কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেবেন। আর চার হাজারের মতো ছাত্র যাবেন ইজতেমা মাঠে। তারা আসবে উত্তরা ও টঙ্গী থেকে। তবে কখন থেকে ইজতেমা মাঠে ছাত্ররা অবস্থান নেবেন এ বিষয়ে আবদুল কুদ্দুছ বলেন, ‘নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেফাকসহ সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার আলেমরা মাওলানা সা’দকে ইজতেমায় দেখতে চায় না।’ এ সময় তাবলিগের একটি অংশের ফয়সাল ও শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিষয়ে প্রতিবাদ করেন মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ। বুধবার বিকালে সৈয়দ ওয়াসিফ বলেছিলেন, ‘মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন কিনা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার বিষয়ে আলেমদের যে বক্তব্য তা আমরা শুনবো, এরপর দেখা যাবে তিনি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন কিনা।’ কিন্তু মাওলানা আবদুল কুদ্দুছের অভিযোগ— ‘সৈয়দ ওয়াসিফের সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি আলেমদের। তিনি মিথ্যে কথা বলেছেন।’ পরে বুধবার সন্ধ্যায় সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাই আমরা সরকারকে জানিয়েছি। এখন সরকারের একটা মধ্যস্থতা দরকার।’ মাওলানা সা’দকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে শুরু থেকে ওয়াকিবহাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘তারা যে দুই ভাগ হয়েছে, আমরা উভয় অংশকেই মেলানোর অনেক চেষ্টা করেছি। এখন তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে?’ এক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী? এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য— ‘তারা একত্রে হয়ে যা সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটাই শুনবো। আমরা নাক গলাতে চাচ্ছি না। এখানে আমরা কোনও দলের সঙ্গে একত্র হতে চাই না। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না।’ সমাধান না হলে সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তারা একত্র হয়ে আসতে পারলে সমাধান হবে, না হলে না হবে। তবে আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করবো। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখবো।’ অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি তো আশা করি, আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। তাদের মাথায় শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেখি।’ শাহরিয়ায় মাহমুদ নামে সা’দ বিরোধী এক তাবলিগকর্মী বলেন, ‘মাওলানা সা’দ ঢাকা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। তাবলিগের কর্মীরা প্রেসক্লাবে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এখানেই আমরা অবস্থান নেবো।’ রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন জোয়ার্দার জানান, বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে তাবলিগকর্মীরা প্রেসক্লাবে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঠেলে দেয়। তারা এখন সেখানেই অবস্থান করছে। তিনি বলেন, 'তাবলিগকর্মীরা জড়ো হলে প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সমস্যা হবে। তাই তাদের প্রতিহত করা হয়েছে।' রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কোনও ধরনের ঝামেলা নেই। পুলিশ সদস্যরা প্রেসক্লাব, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে অবস্থান করছেন। |