/ সারাদেশ / লালমনিরহাটে এতিম স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে ‘পেটানো’ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
লালমনিরহাটে এতিম স্কুলছাত্রকে গাছে বেঁধে ‘পেটানো’ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
নতুন বার্তা, লালমনিরহাট:
|
সাইকেল চুরির অভিযোগে এমদাদুল হক নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রকে গাছে বেঁধে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত স্কুলছাত্র এমদাদুল হক উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের ছেলে। সে মহিষখোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। মা আর বড় বোনকে নিয়ে বাবা হারা এমদাদুলের সংসার। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের খরচ মিটাতে স্কুলের পাশাপাশি মহিষখোচা বাজারের চায়ের দোকান করে সে। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যায় এমদাদুল। পরদিন সকালেই ফোন করে তাকে ডেকে নেন ওই বাজারের প্রভাবশালী মোখলেছার রহমানের ছেলে মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিক বাবু (২৮)। এমদাদুল আসার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু তাকে টেনে পাশের বাগান বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে এমদাদুলের হাত-পা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে জানতে চান যে মঙ্গলবার রাতে তার দোকানের পাশে রাখা বাইসাইকেলটি কোথায়? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমদাদুলকে মারপিট করে গলায় ছুরি ধরে হত্যার হুমকিও দেন ছাত্রলীগ নেতা বাবু ও তার লোকজন। একপর্যায়ে এমদাদুলের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় এমদাদুলের মা আঞ্জু বেগম বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে আদিতমারী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এই অভিযোগে মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিক বাবুকে (২৭) বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের এক জরুরি বৈঠকে আশিক বাবুকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল হোসেন সরকার। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগকে অবগত করে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এক জরুরি বৈঠক শেষে তাকে চূড়ান্তভাবে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ আহত এমদাদুল হকের মা আঞ্জু আরা বলেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এমদাদুল হক পড়াশোনার পাশাপাশি মহিষখোচা বাজারে চায়ের দোকান চালায়। তার আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এবার ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাও দিয়েছে। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন এমদাদুল জানায়, বাবুর দাবি করা বাইসাইকেলের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। অভিযুক্ত বাবু ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। মহিষখোচা হাটের ইজারাদার তমিজার রহমান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি শুনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম আম্বিয়া আদিল জানান, এমদাদুলের সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডান কান ও মাথায় বেশ আঘাত পেয়েছে। তার অবস্থা আশংকামুক্ত হলেও সেরে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। আদিতমারী থানার ওসি হরেশ্বর রায় বলেন, ‘আশিক বাবুসহ তিন জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৪৪৮/৩৪২ ধারায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ |