/ আইন / আদালত / ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেও পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালত!
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহারে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে পদে পদে
ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেও পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালত!
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
২০০৯ সালে একটি বিশেষ অধ্যাদেশে পার্লামেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়ক আইনটি পাশ হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত এর কাজ হলো তাৎক্ষণিকভাবে অন্যায় চিহ্নিত করে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কিছু গূরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের কারণে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ফলের বাজারে , মাছের বাজারে , পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের কেমিক্যাল গোডাউনে, রাস্তায় আনফিট বা লাইসেন্সবিহীন গাড়ি অপসারণে। তাছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণে কিংবা ইভটিজিং প্রতিরোধে এর ব্যবহার প্রশংসিত হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দূর্বলতা হলো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সীমিত বা নেই বললেই চলে। এর কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে এর যথাযথ ব্যবহার নিয়ে। বিশেষ করে হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে পুলিশ ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করেছে। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে স্বোচ্ছার হয়েছেন, রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। এই নিয়ে হাইকোর্টে রিটের কারণে ভ্রাম্যমান আদালত কার্যক্রম অবৈধ ঘোষনা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। এসব সমালোচনার মাঝে ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার অভিযোগ নতুন করে এর কার্য্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১১ সালে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের ১১ জন কর্মকর্তা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে কর্মকর্তারা ইউএনও’র বিরুদ্ধে সরকারি কাজে নানা অনিয়ম এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করার বিষয়টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি জামালগঞ্জের সাচানা বাজারের ৭০ জন ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন,ইউএনও আবুল হাসেম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে তাদের কাছ থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এই দুটো ঘটনা নিয়ে আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক সিলেট বাণী একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পত্রিকাটির রিপোর্টার আকবরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই ইউএনও। হুমকির পর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইউএনও সাংবাদিক আকবরকে সাজা দেন। সাংবাদিক আকবর জানান, তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। ক্ষমতার অপব্যহারের কারণে আদালত তৎকালীন ইউএনও আবুল হাসেমকে ছয় মাসের জন্য ওএসডি’র নির্দেশ দিয়েছিল। এ ঘটনার ছয় বছর পর গত ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর শহরের কাকলি স্কুলের প্রবেশ পথে আবারও ঘটে ক্ষমতার অপব্যবহারের আরেক উদাহরণ। স্কুলের গেটে গাড়ি আগে-পরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও ডা. সালাহ উদ্দিন শরীফের বড় ছেলে মিনহাজের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় ডা. সালাহ উদ্দিন এগিয়ে এসে পরিচয় জানতে চান।কিন্তু এডিসি পরিচয় না দিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।পরে এডিসি শেখ মুর্শিদ ইসলাম পুলিশ দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিনকে স্কুল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নিয়ে যান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তিন মাসের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে সাজা দিয়েছেন তা মোবাইল কোর্ট আইনের কোন ধারায় আছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেছেন, মোবাইল কোর্ট আইনের ১০৪ টি ধারা আছে, কোন ধারায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের সাজা দেয়া হয়েছে। এ সময় আদালত রিটকারীর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, কোন ধারায় সিভিল সার্জনের সাজা দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইনে কি হাতাহাতির ধারা আছে? রিট শুনানির সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে বলেন, এর আগে এক কেন্দ্রে পরীক্ষার চলাকালীন সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছিল। এরপর সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জনকে। সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি এবং তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। দুই কর্মকর্তাকে তলবের পাশাপাশি ব্যক্তিগত দ্বন্ধের জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাজা দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল দিয়েছে আদালত। আইন সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের শাস্তির স্বীকার সাবেক সিভিল সার্জন ডা.সালাহ উদ্দিন শরীফ বলেন,‘ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আমাকে সাজা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। আমাকে হয়রানি করার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়’। |