জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে এবারই ’মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড'-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো৷ তাই এবারের বিজয় দিবস আমাদের জন্য শুধুই বিজয়ের খুশীই নয়, বরং নিয়ে এসেছে বিশ্ববাসীর কাছে মুখ উজ্জ্বল করার আরেকটি খুশীর বার্তা নিয়ে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে 'মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে' অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে তালিকায় এ ভাষণটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দু বছর ধরে নানা পর্যালোচনার পর উপদেষ্টা কমিটি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে বলে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।
মূলত এর মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে যেসব তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের যাতে তা থেকে উপকৃত হতে পারে সে লক্ষ্যেই এ তালিকা প্রণয়ন করে ইউনেস্কো।
ইউনেস্কো জানিয়েছে, তাদের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির উপদেষ্টা কমিটি ৭ মার্চের ভাষণসহ মোট ৭৮টি দলিলকে 'মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে' যুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
'মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল
রেজিস্টারে' অন্তর্ভুক্ত করায় এখন বিশ্ব আরও বেশি করে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।
মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সব মহাদেশ থেকে ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস বা কালেকশন।
ইউনেস্কোর যে উপদেষ্টা কমিটি এ মনোনয়ন দিয়েছে সেই কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল আর্কাইভসের মহাপরিচালক ড: আব্দুল্লাহ আলরাইসি।
প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ওই বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপদেষ্টা কমিটির আরও ১৪ জন সদস্য ছিলেন যারা সবাই বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ ।
৪৫ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এসেছিল এক ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমিতে।
সেদিনের ১৮ মিনিটের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ''এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার
সংগ্রাম"।
ওই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, " ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায়
প্রস্তুত থাকো"। এই বক্তব্যের
মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গৌরবময় সেই দিনে বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানী সেনারা মাথা নিচু করে যৌথ কমান্ডের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে
অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার
জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। পরে ২৫ মার্চ পাকিস্তানী
সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে চূড়ান্তভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় দিবসে তাই আনন্দের সাথে যোগ হয়েছে বেদনাও।
অনেক চরাই-উৎরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়নে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর
খুনীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে- শেষ হওয়ার পথে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াতেও
উড়াচ্ছে বিজয় নিশান।
এবারের বিজয় দিবস আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে নতুন স্বীকৃতি, নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে এবারই ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড'-এর স্বীকৃতি আমাদের নিয়ে গিয়েছে নতুন উচ্চতায়। এবার আমাদের প্রতিজ্ঞা গ্রহণের পালা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ার যুদ্ধে আমাদের সবার সম অংশগ্রহণই হোক এবারের বিজয় দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা।
গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু : যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।
সূত্র: নতুন বার্তা বিজয় দিবস ২০১৭ সংখ্যা