/ মিডিয়া / ৮ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে সাংবাদিক নির্যাতন কলংকময় দিনটি স্মরন করেনা কেউ
৮ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে সাংবাদিক নির্যাতন কলংকময় দিনটি স্মরন করেনা কেউ
আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি:
|
‘৮ ডিসেম্বর’ ঝালকাঠিতে কলংকময় সাংবাদিক নির্যাতনের ১৪তম বছর অতিক্রম করলেও এদিনটি কোন সাংবাদিক বা সাংবাদিক সংগঠন স্মরন করছেনা। ১৪ বছর পূর্বে এদিনে ৪ দলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরের ‘দক্ষিণ হস্ত’ খ্যাত মীর জিয়াউদ্দিন মিজানের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর নগ্ন হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছিল। প্রেস ক্লাবে হামলা, ঝালকাঠি-বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকদের নির্যাতন ও ঝালকাঠির ১০ সাংবাদিকের নামে মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার পর থেকে প্রতিবছর এদিনটি সাংবাদিক সংগঠনগুলো ‘ধিক্কার দিবস’ হিসেবে পালন করলে আসছিল। বর্তমান কতিপয় স্বার্থন্বেষী সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্বে বেেস নিজ ভাগ্যের উন্নয়ন ও ওমর-মিজানের দালাল হয়ে ৮ডিসেম্বরকে আড়াঁল করছে বলে খোজ নিয়ে জানাগেছে। ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর চারদলীয় জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী শাহজাহানের প্রধান সহচর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর জিয়াউদ্দিন মিজানের সন্ত্রাস ও অপকর্মের বিষয়ে দৈনিক দক্ষিনাঞ্চল পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করায় তৎকালীন দক্ষিনাঞ্চল ও বাংলাভিশন এর ঝালকাঠি প্রতিনিধি মরহুম মোঃ হুমায়ূন কবিরকে ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দু’দিন পর ৮ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মৌনমিছিল ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী নেয়। এ কর্মসূচির সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীদের নেতা মিজান তার বাহিনীর ক্যাডারদের নিয়ে পৌর টাউন হলে অবস্থান নেয়। কর্মসূচিতে অংশ নিতে বরিশাল থেকে আগত প্রবীন সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটবেল, স্বপন খন্দকার, পুলক চ্যাটার্জি, শামীম খান, আজাদ আলাউদিন সহ সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের সম্মুখে আসে। তাদের মাইক্রোবাসটি পৌছানো মাত্রই পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের উপর হামলা চালায় ও গাড়ী ভাংচুর করে। তাদের রক্ষা করতে স্থানীয় সাংবাদিকরা বেরিয়ে আসলে মিজান বাহিনী তাদের ৪/৫ জনকেও আহত করে। একদিকে সন্ত্রাসীরা কয়েকটি গ্রুপটি কয়েকজন সাংবাদিকের বাসা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় ও রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসায়। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সাংবাদিকদের খুঁজতে থাকে ও শহরে মাইকিং করে বরিশালের সাংবাদিক শওকত মিল্টন সহ ঝালকাঠির কয়েক সাংবাদিককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। অন্যদিকে মিজানের নেতৃত্বে ক্যাডার বাহিনী বিএনপির মিছিলে হামলা, চাঁদাবাজি ও ক্যামেরা চুরির কল্পিত অভিযোগ এনে ঝালকাঠির ১০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় উল্টো মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এরপর সন্ধ্যা থেকে মিজান বাহিনীর ক্যাডাররা পুলিশ সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের গ্রেফতারে মাঠে নামলে রাতেই সাংবাদিকরা জীবন বাঁচাতে শহর ছাড়ে ও পরের দিন ঢাকায় আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয় ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে পত্র দিয়ে ওমর-মিজান বাহিনীর হাত থেকে সাংবাদিকদের রক্ষার অনুরোধ জানায়। ঘটনার প্রতিবাদে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও ৩২ উপজেলার সাংবাদিকরা এক কনভেনশনের মাধ্যমে প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরকে স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু ঘোষনা করেন। অন্যদিকে ঝালকাঠির ১০ সাংবাদিক হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও ওমর-মিজান বাহিনীর সন্ত্রাসীদের ত্রাসের মুখে ঝালকাঠি ফিরতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে সরকারের টনক নড়লে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি ফয়সালা করার জন্য দেশের ইতিহাসে প্রথম শালিশ-বৈঠকের উদ্যোগ নেয়। বৈঠকে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস ও তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সাংবাদিকরা ঝালকাঠিতে ফিরে আসলে। কিন্ত গত ১৪ বছরেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। |