/ সারাদেশ / ঝালকাঠিতে পিতা হত্যার মামলা করায় পুত্রের ঘরে তালা ঝুলিয়েছে আসামীরা
ঝালকাঠিতে পিতা হত্যার মামলা করায় পুত্রের ঘরে তালা ঝুলিয়েছে আসামীরা
আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি:
|
ঝালকাঠির নলছিটিতে বৃদ্ধ পিতা এসকেন্দার আলী হাওলাদারকে (৬০) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত আসামীরা এবার নিহত বৃদ্ধার পুত্রকে ঘরে আটকে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের বড় ছেলে হত্যা মামলার বাদী মো. লাল মিয়া হাওলাদার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে,নলছিটি উপজেলার ফয়রা গ্রামের অধিবাসী এসকেন্দার আলী হাওলাদারের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবেশী মাহাতাব উদ্দিনের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় এসকেন্দার আলী হাওলাদার বিরোধীয় উক্ত জমির বাঁশঝাড় থেকে একটি বাঁশ কাটতে যায়। এসময় প্রতিপক্ষ মাহাতাব উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগম, দুই মেয়ে ইভা বেগম, ফাতেমা বেগম লোহার হাতুড়ি ও লাঠি নিয়ে বৃদ্ধ এসকেন্দার আলী হাওলাদারের উপর হামলা চালায় ও বেধরক পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। এতে বয়োবৃদ্ধ এসকেন্দার আলী গুরুত্বর আহত হলে আশংকা জনক অবস্থায় তাকে কুশংগল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আতিউর রহমান তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্গ ৩ সপ্তাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর মধ্যে পাঞ্জা লড়ে গত ২১ নভেম্বর সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। ১ সেপ্টেম্বর হামলার পর এসকেন্দার হাওলাদারের ছোট ছেলে রিপন হাওলাদার পিতাকে মারধরের ঘটনায় সেই দিনই নলছিটি থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নলছিটি থানায় অভিযোগ রেকর্ড না করে এএসআই সোহাগ ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দিলে তিনি একাধিকবার ফয়রা গ্রাম ঘুড়ে ও আসামীদের সাথে দেখা স্বাক্ষাত করার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে দীর্গসূত্রীতার আশ্রয় নেয়। এ অবস্থায় গত ২১ নভেম্বর চিকিৎসাধীন এসকেন্দার আলী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলে অভিযোগকারী রিপন পুনরায় নলছিটি থানার এএসআই সোহাগকে জানায়। লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতের ছোট ছেলে রিপন তার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এএসআই সোহাগ কর্কশ ভাষায় বলে ‘তোর বাবার ঘটনায় থানায় কোন মামলা নেয়া হয়নি। তাই এ বিষয় নিয়ে আর থানায় আসবি না’। নলছিটি থানা পুলিশের বেআইনী ভূমিকায় অসহায় বড় ছেলে মো. লাল মিয়া হাওলাদার বাদী হয়ে পিতার হত্যার বিচার চেয়ে গত ২৯ নভেম্বর ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহাতাব উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রাশিদা বেগম এবং দুই মেয়ে ইভা বেগম ও ফাতেমা বেগম এর নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। খবর পেয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামী মাহাতাব উদ্দিন ও তার দলবল নিহতের ছোট ছেলে রিপনের ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে ঘরের ভিাটামাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে চটিয়ে দেয়। এ অবস্থায় গত ৩০ নভেম্বর পিতৃহারা অসহায় রিপন হাওলাদার নলছিটি থানায় একটি জিডি (নং-১০৬০) দায়ের করে। অথচ পুলিশ সাধারন মানুষের বন্ধু দাবীদার হলেও অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে নলছিটি থানা পুলিশ কোন শত্রুতার বদলা নিচ্ছে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা নিহতের পুত্ররা। এ অবস্থায় হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড় ছেলে লাল মিয়া হাওলাদার বলেন, আমার বাবা একজন নিরিহ মানুষ। আমাদের জমিজমা প্রতিপক্ষরা দখল করে নিয়েছে তাতেও কোন দু:খ ছিলনা। কিন্তু আমাদের জমি থেকে সামান্য একটি বাঁশ কাটার অপরাধে আসামীরা বাবাকে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে এমন করে পিটালো যে ৩ সপ্তাহ চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা ফিরিয়ে আনতে পারলোনা সেটাই কষ্ট। তিনি অভিযোগ করেন, আসামীরা প্রভাব ও অর্থশালী বিধায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। আর পুলিশও সত্যের পক্ষে কোন ভূমিকা রাখছেনা। তাই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আজ আমরা বাড়িঘর ছাড়া। এঅবস্থায় আসামীদের গ্রেপ্তার ও তদন্তপূর্বক কঠোর বিচারের জন্য তারা ঝালকাঠির পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। |