/ রাজনীতি / সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে নিয়ে উভয় সংকটে আ’লীগ
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে নিয়ে উভয় সংকটে আ’লীগ
নতুন বার্তা, ঢাকা:
|
সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগেই মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উভয় সংকটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর বিরোধী কেউ মেয়র পদে পাস করলে তার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। আর দলীয় কেউ মেয়র হলে আওয়ামী লীগকে আরও অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হতে হবে। এর বাইরে হঠাৎ করেই প্রার্থী বাছাই, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রমাণ- একই সঙ্গে ফল ঘরে তোলা নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীন শিবির। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্মবিশ্বাস, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক দৃশ্যমান সফলতার যে চিহ্ন রেখে গেছেন, এতে ভোটাররা আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, শূন্য ঘোষণার দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পরই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, ৩০ নভেম্বর থেকে ৯০ দিন, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পদে উপ-নির্বাচন করার বিষয়ে কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সব ঠিক থাকলে ভোট গ্রহণের অন্তত ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সংসদ ও রাজপথের বিরোধী দলসহ নানা সমীকরণে এগোচ্ছিল আওয়ামী লীগ। রাজধানী ঢাকার মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই সিটির নির্বাচন, ফলাফল ও এর প্রভাব নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছে তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তের এই উপ-নির্বাচন সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে এটা বলাই বাহুল্য। এতে যদি ফল সরকারের ঘরে না ওঠে, তার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাস করলেও গতানুগতিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে বিরোধী শিবির থেকে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। ফলে বেশ ভেবে-চিন্তেই এগোতে হচ্ছে সরকারি দলকে। ঢাকাকে দুই ভাগ করার পর গত নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের সফল ব্যবসায়ী আনিসুল হককে উত্তর সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন দিয়ে বেশ ফুরফুরেই ছিল আওয়ামী লীগ। সেবার নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হলেও জয় হয়েছে দলটিরই। গত দুই বছরে কর্মঠ, স্বপ্নচারী ও সাহসী আনিসুল হক তার কর্মকাণ্ডে জনতার মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু, আনিসুল হকের এ ইমেজ কতটা কাজে লাগাতে পারবে আওয়ামী লীগ, এ নিয়েই আওয়ামী শিবিরে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘আগাম করুক, আর যথাসময়ে করুক আওয়ামী লীগের ব্যস্ততা এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচন। হঠাৎ করে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এতে তাদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দিতেই পারে। তারা পদটি খালি রাখবে, না নির্বাচন দেবে?’ তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন দেয়, তাহলে এটা তাদের জন্য টেস্ট কেস হতে পারে। বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে এই নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করবে। জনপ্রিয়তার মাপকাঠি যাই হোক, ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তায় স্বাভাবিকভাবেই ভাটা পড়ে। জনগণ সমালোচনা করতে পছন্দ করে। অতএব, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বেশ ঝুঁকির। ফলে ভেবে-চিন্তেই তারা এগোতে চাইবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন, সংকট-সম্ভাবনা তো আছেই। ফলাফল যাই হোক নির্বাচন করতে হবে, এর বিকল্প নেই। এ নিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, এ নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রয়াত মেয়রের কাজ ও আওয়ামী লীগের ডায়নামিক নেতৃত্বগুণে ভালো ফলাফলই অপেক্ষা করছে দলটির জন্য। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের সময় প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নির্বাচনী সমন্বয়ক ছিলেন কর্নেল (অব.) ফারুক খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমরা নির্বাচনমুখী দল। স্থানীয় সরকার হোক বা জাতীয়, আমরা সব সময় নির্বাচনের জন্যই প্রস্তুত।’ ফারুক খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করলে আমরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেব। ইনশাআল্লাহ, আমরা জিতব। কারণ এই এলাকার অনেক উন্নয়ন আমাদের সময়ে হয়েছে। আমরা মনে করি না, নির্বাচন হলে আমাদের হেরে যাওয়ার ভয় আছে বা কোনো কারচুপি হবে। বিএনপিসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা আসবে, তাদের আমরা নির্বাচনে স্বাগত জানাই।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনও একই সুরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী দল; নির্বাচনকে ভয় পায় না। ৫ জানুয়ারি পেট্রল বোমাসহ নানা হামলা মোকাবেলা করে যখন নির্বাচন করতে পেরেছি, এখন আমরা যেকোনো নির্বাচনেই সফল হব।’ |