/ সারাদেশ / পত্নীতলায় মেয়েদের জন্য সেরা বিদ্যালয় পুরস্কার প্রদান ২০১৭ অনুষ্ঠিত
পত্নীতলায় মেয়েদের জন্য সেরা বিদ্যালয় পুরস্কার প্রদান ২০১৭ অনুষ্ঠিত
আর আই সবুজ, নওগাঁ:
|
নওগাঁর পত্নীতলায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং নারী ও কন্যাশিশুর নেতৃত্বে বিশ্ব এর সহযোগিতায় মেয়েদের জন্য সেরা বিদ্যালয় ক্যাম্পেইন উদ্যোগের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০ টায় পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মালেক, বিশেষ অতিথি হিসেবে যথাক্রমে মরিয়ম বেগম শেফা, ভাইস চেয়ারম্যান পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ, মাহমুদা সুলতানা - উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার, কেএম সরওয়ার্দি, উপজেলা সমবায় অফিসার, পত্নীতলা, সুলতান আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, পত্নীতলা, মো. আলম আলী, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার, পত্নীতলা, মো. জাহিদুর রহমান, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, পত্নীতলা, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইজাবুল হক, পত্নীতলা প্রেসক্লাব সভাপতি বুলবুল চৌধুরী, সেরা বিদ্যালয় নির্বাচক প্যানেলের সভাপতি আলহাজ¦ জয়নাল আবেদিন ও গণগবেষণা ফোরাম সভাপতি শাহীনুর রহমানপ্রমূখ। বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন ”মেয়েদের জন্য সেরা বিদ্যালয় ক্যাম্পেইন উদ্যোগের ফলে পতœীতলা উপজেলায় বাল্যবিবাহ কমে গিয়েছে এবং বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অভিভাবকরাও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। ফলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে চলেছে। আমি আশা করি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ নিজেদের সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গর্ববোধ করবেন এবং নির্ধারিত নির্ণায়কের ভিত্তিতে প্রাপ্ত নম্বর পর্যালোচনা করে নিজেদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবেন।” প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন ”সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব একটা কর্ম-পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং মেয়েদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার দায়িত্ব শুধু শিক্ষক এবং অভিভাবকদের নয়, এক্ষেত্রে অভিভাবক, এনজিও এবং বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বও রয়েছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সেই কাজটি করে চলেছে। আমাদের সবার উচিত হবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের দিকটি বিবেচনা করা। আজকের শিক্ষার্থী আগামি দিনে বাংলাদেশকে স্বনির্ভরতায় ভরিয়ে তুলবে। আপনারা সবাই সেরা, আজকে অন্যদের সেরা ঘোষণার মধ্যদিয়ে আপনারা অপরকে সুযোগ করে দিলেন। আজকের দিনে আমি সেই সৌভাগ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলাম।” বিশেষ অতিথি জনাব ইজাবুল হক -প্রধান শিক্ষক-উত্তরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও সভাপতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বলেন ”আমরা পত্নীতলা উপজেলাকে শিশু বিবাহমুক্ত করতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। ইভটিজিং, মাদক প্রতিরোধে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আমরা সফলতার সাথে এগিয়ে চলেছি। আমরা আশাবাদি সামনের দিনগুলোতে আমরা সবাই চ্যাম্পিয়ান হবো।” ২০১৭ সালের সেরা উদ্যোগী শিক্ষক হিসেবে পুরষ্কৃত হন বাঁকরইল বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসেদ আলী, কাদিয়াল সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম রাব্বানী, চকমুলি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সনজিত কুমার মন্ডল এবং পাটুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বাসেদ আলী বলেন ”মেয়েদের জন্য সেরা বিদ্যালয় শুধু বিদ্যালয়েই নয় আমাদের সমাজ গঠনে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। আমি সবসময় মনে করেছি মেয়েরা ফুটন্ত ফুল হয়ে দেশ জুড়ে সৌরভ ছড়াবে। শিক্ষকতা পেশায় জেনেশুনে এসেছি, এ পেশার মর্যাদা রক্ষা করতে যা যা করণীয় সব কিছুর জন্য প্রস্তুত রয়েছি।” সেরা অভিভাবক হিসেবে পুরষ্কৃত হন ডাসনগর মলংশাহ দাখিল মাদ্রাসার ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাপলার মা মনোয়ারা বেগম, পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম হাসদার মা সুমি হাসদা, বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের মা শাহনাজ বেগম, পুঁইয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসি’র মা রাজিয়া সুলতানা এবং দুঃসাহসী অভিভাবক হিসেবে আব্দুল মজিদ মিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অভিভাবকগণ অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ”আমরা শুধু আমাদের মেয়েকেই নয়, এলাকার অন্যান্য মেয়েদের শিক্ষা ও সচেতনতায় সব সময় খোঁজ রেখেছি। আমরা মনে করি মেয়েরা সমস্যা নয়, একটু সচেতনভাবে খেয়াল করলেই তারা সম্ভাবনা হয়ে দেখা দেবে।” এ বছর শিক্ষার্থীদের উদ্যোগের দৃষ্টান্ত হিসেবে সেরা ইউনিট পুরষ্কার পায় গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ইউনিট, চকফরিদ মেহেরুল্লাহ দাখিল মাদ্রাসা, নিরমইল দারাজিয়া দাখিল মাদ্রাসা এবং সন্তোষপাড়া দাখিল মাদ্রাসা। পাঁচটি নির্ণায়কের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে সেরা বিদ্যালয় হিসেবে পুরষ্কৃত হন মেয়েদের স্কুলে অংশগ্রহণ ও পড়াশুনার উন্নত মানের জন্য - পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয়, মেয়েদের নেতৃত্বের বিকাশের জন্য - খিরসীন এসকে উচ্চ বিদ্যালয়, সহায়ক পরিবেশের জন্য - বামইল উচ্চ বিদ্যালয়, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য গাহন উচ্চ বিদ্যালয় এবং কার্যকর শিক্ষক, অভিভাবক সভার জন্য পুঁইয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারি ৪০ জন সহায়কের মধ্যে সেরা সহায়ক পুরস্কার পান আরিফুল ইসলাম এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সর্বাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পত্নীতলা প্রেসক্লাব সভাপতি বুলবুল চৌধুরী, সৃজনশীল সংবাদ পরিবেশনের জন্য গোলাপ খন্দকার এবং উদীয়মান প্রতিভাবান সাংবাদিক হিসেবে রবিউল ইসলাম সবুজকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। |