/ অপরাধ / বন্ধুর হাত ধরেই ডুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী সামাদের জঙ্গি জীবনে পদার্পণ!
বন্ধুর হাত ধরেই ডুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী সামাদের জঙ্গি জীবনে পদার্পণ!
হাবিব সরোয়ার আজাদ
|
উচ্চ শিক্ষার্থে দু’বছর ধরে প্রবাসে থাকার কথা থাকলেও পরিবারের সদস্যরা জানালেন মেধাবী শিক্ষার্থী সামাদ তার কাতার প্রবাসী বন্ধু এক সময়ের শিবির নেতা মামুনের হাত ধরেই জঙ্গি জীবনে পর্দাপণ করেছে।’ পরিবার থেকে প্রায় দু’বছর ধরে বিচ্ছিন্ন থাকা সুনামগঞ্জের ছাতকের কাটাশলা গ্রামের কলমধর আলীর ছেলে আবদুস সামাদ ওরফে সামসেদ ওরফে সামাদ গত মঙ্গলবার কলকাতায় আরো দুই জঙ্গির সাথে সেখানকার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।’ আবদুস সামাদের পারিবারীক সুত্র জানায়, সুনামগঞ্জের ছাতকের দোলার বাজার ইউনিয়নের কাটাশলা গ্রামের কলমধর আলী দ্বীর্ঘ কয়েক বছর মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ছিলেন। কলমধর আলীর ১২ সন্তানের মধ্যে চার ছেলে ইতালী প্রবাসী। এলাকায় কলমধর আলীর পরিবারটি শিক্ষিত ও ধন্যাঢ্য হিসাবেই পরিচিতি। কিন্তু তার সপ্তম সন্তান সামাদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার খবর পরিবারটিকে নতুন করে বিতর্কে ফেলে দিয়েছে।’ পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ছাতকের মঈনপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে আবদুস সামাদ ওরফে সামসেদ ওরফে সামদ। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে, এমন স্বপ্নে পরবর্তীতে সামাদকে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি করেন বাবা-মা। সেখান থেকে ২০১৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে ডুয়েটে ভর্তি হয় সামাদ।’ সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াকালীন ওই প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন শিবির সভাপতি মাহবুব আহমদের সাথে প্রতিভা হলে থাকতো সামাদ। প্রায় দেড় বছরের মতো ছিল সেখানে। পরে সিলেট নগরীর মিরাবাজারে মৌসুমী ১২০নং বাসায় ছোট ভাই সুলেমান আহমদকে নিয়ে ভাড়ায় ওঠে সে। লিডিং ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের ছাত্র মামুনও থাকতো তাদের সাথে। মামুনের সাথে সখ্যতা ছিল সামাদের।’ আবদুস সামাদের ছোট ভাই সুলেমান আহমদ বলেন, ‘সামাদ ও মামুন বাসায় একইসাথে টিভি দেখতো, দুজনই ছিল মুক্তমনা। হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে মামুনের মধ্যে। টিভি দেখা বন্ধ করে সে মনোযোগী হয় ধর্মকর্মে। কিছুদিন পরেই একই পরিবর্তন দেখা যায় সামাদের মধ্যেও।’ কিন্তু প্রথমদিকে এই পরিবর্তন তাদের কাছে খুব অস্বাভাবিক মনে হয়নি। কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে মামুন আটক হওয়ার পর সামাদের পরিবর্তন নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু সে সময় সামাদের সাথে তাদের যোগাযোগের কোন সুযোগও ছিল না। এর আগেই পরিবার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল সামাদ। সুলেমানের আরো দাবি করেন, তার ভাইয়ের পরিবর্তন কিংবা যদি জঙ্গি জীবনে পদার্পণ করে থাকে তাহলে তার বন্ধু মামুনের হাত ধরেই হয়েছে। মামুনই সামাদকে বিপথে নিয়েছে।’ উল্ল্যেখ যে, চলতি বছর শুরুর দিকে মামুনকে সিলেট শহরতলির মেজরটিলাস্থ একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। কয়েক মাস পর সে জামিনে বেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার পালিয়ে যায়। সুলেমান আহমদ আরো জানান, সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাড়িতে এসেছিল সামাদ। বাড়ি থেকে যাওয়ার পর থেকে তার ফেসবুকের আইডিটিও ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখে সে। এরপর একবারই ফোনে মায়ের সাথে কথা বলেছিল সামাদ। সামাদের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘প্রায় দু ’বছর আগে একদিন ফোন করেছিল সামাদ। উচ্চশিক্ষার্থে সে বিদেশ যাচ্ছে এ কথা বলেই ফোন রেখে দেয় সে। এরপর ওই নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।’ আছিয়া বেগম বলেন, ‘বারো সন্তানের মধ্যে সামাদ ছিল সপ্তম। ছোটবেলা থেকেই সামাদ খুব মেধাবী ছিল। ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন নিয়ে তাকে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়েছিল। বিপথগামী হয়ে সে শুধু নিজের নয়, পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আছিয়া বেগম বলেন, ‘ছেলে আমার চোখের সামনে ছিল না। আমার কাছে থাকলে হয়তো ওই পথে যেতো না।’ সামাদের পিতা কলমধর আলী বললেন, কলতাকায় গত মঙ্গলবার সেখানকার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জানতে পেরেছি আমার ছেলে উচ্চ শিক্ষার কথা বলে প্রবাসে গিয়ে শেষ পর্য্যন্ত বিপথগামী হয়েছে, এর আগে আমরা জানতাই না সামাদ জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িয়ে পড়েছে, তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভ হচ্ছিল না প্রায় দেড় বছর পুর্বে একবার বাড়ি এসছিলো এরপর আর তার কোন হদিস পাচ্ছিলাম না।’ সুনামগঞ্জের সহকারি পুলিশ সুপার মো. হাবিবুল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, ‘কলকাতায় সামাদ আটকের পর জেলা পুলিশের পক্ষ্য থেকে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে সুনামগঞ্জে থাকা অবস্থায় সে জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত ছিল না। সিলেটে অথবা ডুয়েটে পড়াশোনা করার সময়ই সে জঙ্গি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়।’ উল্লেখ্য যযে কলকাতা আদালতের নির্দেশে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্য্যন্ত সামাদকে অপর দু’জঙ্গির সাথে রিমান্ডে রাখার আদেশ দিয়েছেন।’ কলকাতার পুলিশের সন্দেহ সামাদ সহ গ্রেফতার হওয়া তিনজনই আল- কায়েদার সদস্য হতে পারেন।’ |