/ প্রবাস বাংলা / যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর পাশে থাকার সাময়িক অনুমতি পেল রিয়াজ!
যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর পাশে থাকার সাময়িক অনুমতি পেল রিয়াজ!
ডেস্ক রিপোর্ট
|
রিয়াজ তালুকদার (৫০) নামের একজন বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীকে অস্থায়ী বসবাসের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়াজের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে সে দেশে বসবাসের অনুমোদন দেয়ার অনুরোধে তুমুল জনসমর্থন গড়ে ওঠে। একজন সংখ্যালঘু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা রিয়াজ তালুকদারের দুটি ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে তার অবস্থানরত স্ত্রী মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। রিয়াজ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে নিয়ম মেনে সে দেশের অভিবাসন সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এ (আইসিই) প্রতিমাসে হাজিরা দিতেন। গতমাসে হাজিরা দেয়ার সময় অভিবাসন সংস্থা তাকে নিউ ইয়র্কের একটি আইসিই ফ্যাসিলিটিতে ফিরে যেতে বলে। সেখান থেকে ওয়ানওয়ে বিমান টিকিটে তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে আদালতে আবেদন জানান রিয়াজ। থাইরয়েডের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা স্ত্রীর পাশে তার থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন জানিয়ে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে দেয়ার আবেদন জানান তিনি। তার এই মানবিক সঙ্কটের কথা জানতে পেরে তার পাশে এসে দাঁড়ায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পক্ষে গড়ে ওঠে তুমুল জনমত। তাকে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থাকার মানবিক সুযোগের আবেদন জানিয়ে পিটিশনে সই করেন হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক। এতে শেষ পর্যন্ত মন গলে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষের। রিয়াজকে আপাতত ছয় মাসের অস্থায়ী বসবাসের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত রিয়াজ এনবিসি-২ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, এখন আমি ঘরে গিয়ে আমার স্ত্রীকে আলিঙ্গন করবো। বলবো, ভয় পেয়ো না, আমি তোমার সঙ্গেই আছি। ডেইলি বিস্টকে করা এক মন্তব্যে রিয়াজ আরো বলেন, আমার স্ত্রী অনেক বড় বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সে সারারাত ঘুমাতে পারে না। একা একা ঘরময় পায়চারী করে আর নিজে নিজে বিড়বিড় করে কথা বলে। এই অবস্থায় আমি তার পাশে না থাকলে সে একেবারে ভেঙে পড়তো। গত সপ্তাহে রিয়াজের পক্ষে আবেদন জানানো আইনজীবী এডওয়ার্ড কুকিয়া তার অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি প্রাপ্তির বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মানবিক অবস্থা বিবেচনায় বর্তমানে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে তাকে বসবাসের স্থায়ী অনুমোদন পেতে এখনো হাঁটতে হবে অনেকটা পথ। রিয়াজ তালুকদারের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয় কয়েক বছর পূর্বে। সে সময় একপর্যায়ে তাকে আটকও করা হয়। কাজের অনুমোদন শেষ হয়ে যাবার পরেও কাজ করে যাবার অভিযোগে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর তাকে নিউ জার্সির একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৭ মাস আটকে রাখা হয়। সোমবার গণমাধ্যমের কাছে সে সময়ের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে রিয়াজ তালুকদারের ১৩ বছর বয়সী ছেলে রাফি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ওই ৭ মাস আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। আমাদের সব আশা ফুরিয়ে গিয়েছিল। বাবা না থাকা মানে পুরো পৃথিবী ফাঁকা হয়ে যাওয়া। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে হাত দিয়ে অশ্রু মুছে যাচ্ছিল ১৩ বছর বয়সী ওই বালক। এতে ওই সম্মেলনে উপস্থিত অনেকের চোখেই জল নেমে আসে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর আইসিইতে হাজিরা দেয়ার শর্তসাপেক্ষে রিয়াজ তালুকদারকে মুক্তি দিয়েছে অভিবাসন সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে রিয়াজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের ক্ষেত্রেগুলো প্রায়োরিটি (কম গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিশেষ করে, যেহেতু তার নামে কোনো ধরনের আইনভঙ্গের মামলা কিংবা অভিযোগ ছিল না। কিন্তু এ বছরের শুরুতে ট্রামপ প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির কবলে পড়ে নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় রিয়াজকে। একপর্যায়ে দেয়া হয় জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবার হুমকি। তবে এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার রিয়াজ একাই নন, তার সঙ্গে আছেন আরো ১৭ লাখ অবৈধ এশিয়ান অভিবাসী। ট্রামপ প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির খড়গে পড়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এমন লাখ লাখ বৈধ-অবৈধ অভিবাসী। এ প্রসঙ্গে লুসি হারসেল নামের এক আইনজীবী সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, জোর করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের হুমকিতে আছেন রিয়াজের মতো লাখ লাখ মানুষ। রিয়াজের সাময়িক সমাধানের ঘটনা এই সার্বিক পরিস্থিতির একটা অতি ক্ষুদ্র ইতিবাচক সমাধান। সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে আমাদের এখনো অনেক পথ হাঁটা বাকি। তিনি আরো বলেন, রিয়াজের মতো হুমকিতে থাকা মানুষেরা আমাদের বন্ধু এবং পরিবারের অংশ। তারা আমাদের প্রতিবেশী, সহকর্মী। তাদেরকে এ ধরনের অভিবাসন আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। সামনের মে মাসে আবার হাজিরার অপেক্ষায় থাকা রিয়াজ তালুকদারের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। আপাতত অস্থায়ী বসবাসের অনুমোদন রিয়াজের মতো এমন আরো অসংখ্য আভিবাসন প্রার্থীর জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এ নিয়ে সরব রয়েছে সে দেশের সচেতন সমাজ। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ঘর বলে গণ্য করা রিয়াজকে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন দেবার পক্ষে আবেদন জানিয়ে যাচ্ছে। সূত্র: মানবজমিন। (হাফিংটন পোস্ট এ প্রকাশিত নিবন্ধের অনুবাদ) |